কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হারায় তার ১৪৪জন নেতাকর্মীকে। ১৬ জুলাই আন্দোলন চলাকালীন চট্টগ্রামের মুরাদপুরে বেপরোয়া গুলিতে ওয়াসিম আকরাম নিহতের মধ্য দিয়ে যার সূচনা।
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, আন্দোলনের শুরুতে নৈতিক সমর্থন থাকলেও ৮ জুলাই বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি থেকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আর মৌন সমর্থক থাকেনি। সরাসরি কর্মসূচিতে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। তবে কৌশলগত কারণেই সামনের নেতৃত্বে আসেনি ছাত্রদল। সে সময়ের কর্মপন্থা নিয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছে যমুনা নিউজ।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, পাশ্ববর্তী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) ঢাকা কলেজসহ অপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশনা দেয়া হয়, যেখানেই কোটা সংস্কার আন্দোলন সংঘটিত হবে তোমরা সেখানে অংশগ্রহণ করবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ১৭ তারিখে ঢাকায় বড় পরিসরে যে মিছিল-মিটিংগুলো হয়েছিল সেখানে ছাত্রদলের তিনজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছিল। ১৮ তারিখ বাড্ডা ও রামপুরাতেও নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সেখানেও ছাত্রদলের নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে। শহীদের সংখ্যাটা ১৪৪ এর মতো। ১৬ তারিখের পর থেকে আসলে আমাদের কোনও নেতাকর্মী ফ্রন্টলাইন ব্যতীত আর কোথাও ছিল না। একদম পেছনের থেকে সামনে চলে আসছে, ওয়াসিম শহীদ হওয়ার পর থেকে।
‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ এই স্লোগানের সঙ্গে ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ এই সংযুক্তি যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল থেকে উঠে আসা; তেমনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইল লাল করা সিদ্ধান্ত।
নাছির উদ্দিন নাছির জানালেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদসহ যারা রয়েছেন তারাও বলেছেন, ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কাউকে যেন সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে রাখা না হয়। এটা বোঝাপড়ার মাধ্যমে হয়েছে।
ধীরে ধীরে আন্দোলন যখন কোটা সংস্কার ছেড়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়, তখন সবটুকু দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় নেতারাও জড়ান সরাসরি সংঘর্ষে। বহু নেতাকর্মীর মতো সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও হন আহত।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ছাত্রদলের নেতারাই প্রথম শেখ হাসিনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বৈরাচার বলার দুঃসাহস দেখিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে আমরা সে ভূমিকার মাধ্যমে যাত্রাবাড়ি, ধোলাইখাল ও জুরাইনকে সন্ত্রাসীমুক্ত করেছি। সেখানে অগ্রভাগে ছাত্রদল ভূমিকা পালন করেছে।
নাছির উদ্দিন নাছির বলেছেন, কারফিউ ভেঙে যে মিছিল করা যায় সে সাহস যোগানোতে আমরা চেষ্টা করি। তারেক রহমান আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন যে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদেরই প্রথম কারফিউ ভেঙে মিছিল করতে হবে। তাহলে মানুষ সাহস পাবে নয়তো মানুষের পক্ষে কারফিউ ভাঙা কঠিন হয়ে যাবে।
ছাত্রদল বলছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পুরোটা সময় সংগঠনটির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে। আন্দোলনের যেকোনও সিদ্ধান্তই যৌথভাবে গৃহীত হতো বলে জানান তারা।
নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, আমরা এই আন্দোলনকে একদফার আন্দোলনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা স্টেকহোল্ডার ছিল, তাদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছি। দিনে আমাদের মাঠে থাকতে হতো, রাতের বেলা পলিসি মেকিংয়ে কাজ করতে হয়েছে। তারেক রহমানকে প্রতিদিনই আপডেট দিতে হয়েছে। উনার নির্দেশনাগুলো আবার মাঠে বাস্তবায়ন করতে হয়েছে।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, নাহিদ-আসিফ যখন ছিল তখন আমার সাথে কথা হতো, আর যখন নাহিদ-আসিফ ছিল না, তখন পরের সমন্বয়ক যারা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেছি এবং তারা একটি কর্মসূচিও আমাদের কনসার্ন ব্যতীত গ্রহণ করেনি। আমি এটি স্পষ্টভাবে বলছি।
অভ্যুত্থানের বছর পেরিয়ে ছাত্রদলের হতাহত নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ সংগঠনটির। ছাত্রদল সভাপতির অভিযোগ, তাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন সফল করেছি। কিন্তু তারপর থেকে তারা ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে।
প্রিন্ট/ডাউনলোডঃ ৯ জুলাই, ২০২৫, রাত ১১:০৩
সম্পাদক: সানি আজাদ
প্রকাশক: মিসেস সানি আজাদ